শুক্রবার , ১ ডিসেম্বর ২০২৩ , রাত ১০:০৫
ব্রেকিং নিউজ

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে এসি, ফ্রিজ, টিভিভর্তি ‘হোটেল রুম’ কেন

রিপোর্টার :
প্রকাশ : রবিবার , ৫ মার্চ ২০২৩ , সকাল ০৬:৪৫

লেখা:রাজিমুল হক রাকিবঃ

সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় বিচিত্র জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জনের জায়গা হলেও বাংলাদেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়–জীবন শেষ হয় খাবার ও থাকার তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের খাবারের মান ও আবাসন নিয়ে পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি হলেও তাতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তেমন কোনো টনক নড়ে না।

নিরাপদ খাদ্য ও বাসস্থান একজন নাগরিকের অধিকার হলেও সম্ভবত তার সবচেয়ে বেশি লঙ্ঘন হয় বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। আবাসিক হলের ক্যানটিনগুলোতে নিয়মিত পচা–বাসি খাবার পরিবেশন করা, এটা নতুন কিছু নয়। যদিও ক্যানটিনের খাবারের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য একজন আবাসিক শিক্ষক থাকেন, তবে দুঃখের বিষয় হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তিনি তাঁর দায়িত্ব পালনকালে কখনো ক্যানটিনের খাবারের মান যাচাই করা দূরের কথা, ক্যানটিনেও প্রবেশ করেন না।

দ্বিতীয় বিষয় যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো আবাসনের সংকট। এটাই সত্যি, আবাসনের সংকটের বেশির ভাগ ইচ্ছাকৃত বা প্রশাসনের অবহেলার ফল। যদিও বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র কোনো বৈষম্য করবে না। তাহলে কোন ক্ষমতা বা অধিকার বলে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়ে একজন সম্পূর্ণ একটি কক্ষে একা থাকেন, ভেতরে থাকে এসি, ফ্রিজ, টিভিও। দেখে মনে হয় যেন দামি কোনো হোটেলের কক্ষ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাঁদের ছাত্রত্ব নেই।

তার ঠিক উল্টো চিত্র প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষের বৈধ শিক্ষার্থীদের বেলায়। তাঁরা এক রুমে গাদাগাদি করে বাস করেন ৩০ থেকে ৪০ জন। তাহলে সব শিক্ষার্থীর সমান অধিকার নিশ্চিত হলো কোথায়? এটা কি মানবাধিকার এবং সংবিধানের লঙ্ঘন নয়? বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে বিষয়টা সবচেয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে, তা হলো টর্চার সেল। বর্তমানে টর্চার সেলে শিক্ষার্থী নির্যাতন একটা স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের নির্লিপ্ততা সবচেয়ে বেশি দায়ী।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের প্রভাব কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। যদিও তারা বর্তমানে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য বদ্ধপরিকর, তবে তাদের স্মার্ট শব্দের অর্থ এখনো পরিষ্কার নয়। একটা স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্যই যেখানে কোনো গণরুম থাকবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়মিত শিক্ষার্থীদের তথ্য হালনাগাদ করবে, যেখানে সব শিক্ষার্থী সমান অধিকার লাভ করবে, আবাসিক হল এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

আশা করি, তারা সত্যিই স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণে প্রচেষ্টা চালাবে। তবে বর্তমানে একজন মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা স্যারের মতো ছাত্রবান্ধব শিক্ষকের খুবই অভাব, যাঁরা ছাত্রদের প্রয়োজনের সময় পাশে দাঁড়াতে পারেন বা ছাত্রদের জন্য পদত্যাগ করতে পারেন।

রাজিমুল হক রাকিব

সলিমুল্লাহ মুসলিম হল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়