নুরুল আমিন ভূঁইয়া দুলাল লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম মিরাজ (২৬) হত্যা মামলার রায় আজ সোমবার (২২ মে) ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন আদালত সূত্র ।
মিরাজ হত্যায় জড়িত আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মিরাজের পরিবার ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ সহ দলের সর্বোচ্চ নেতৃবৃন্দ গান ।
মিরাজ হত্যার রায় সম্পর্কে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. জসিম উদ্দিন মানবকণ্ঠ প্রতিনিধিকে বলেন, আজ সোমবার চাঞ্চল্যকর মিরাজ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে। এই আলোচিত হত্যা মামলাটি প্রায় সাড়ে ৯ বছর পর তদন্ত, সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে আজ এ রায় হওয়ার কথা।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায় এদিকে এই মামলাটিতে একাধিকবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে। সবশেষ ২০১৬ সালের ১২ মে তদন্ত কর্মকর্তা ও লক্ষ্মীপুর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপ-পরিদর্শক মোজাম্মেল হোসেন আদালতে ১২ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। হত্যা মামলার বিষয়ে মিরাজের পরিবার আক্ষেপ করে বলেন, মামলাটি ধীরগতিতে পরিচালিত হওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
তথ্য অনুসন্ধানে ও প্রতিবেদনে জানা যায়,হত্যাকান্ডে জড়িত আসামিদের সঙ্গে মিরাজের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল।
মিরাজের কাছে তাদের (আসামিদের) ব্যবসার সাড়ে তিন লাখ টাকা ছিল। ওই টাকা বণ্টন নিয়ে তার সঙ্গে মনোমালিন্য হয়। জানা যায় হত্যাকাণ্ডের দুই-তিনদিন পূর্বে আসামিরা মামলার বাদী মিরাজের বাবা আবুল কালামের মাছের দোকানে গিয়ে হামলা করেন। এসময় তারা মিরাজের খোঁজ করে হুমকি দিয়ে চলে যান। তখন তারা মিরাজের বাবা আবুল কালামকে রায়পুরের স্থানীয় একটি খাবার হোটেলে ডেকে নিয়ে হুমকি-ধামকি প্রদর্শন করেন ।
তথ্যসূত্র প্রতিবেদনে জানা যায় এর তিনদিনের মাথায় ঘটনার দিন ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর জহিরের বাড়িতে মিরাজকে ডেকে নিয়ে ব্যবসায়িক কথাবার্তা বলেন তারা। এর পরে কৌশলে তাকে মোটরসাইকেলযোগে ভূঁইয়ার হাটের দিকে নিয়ে যান।
এসময় মাসুদ ও সোহেল তার সঙ্গী হন। এর পরে মিরাজের অবস্থান নিশ্চিতের জন্য মাসুদ ও সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন অন্য আসামিরা। ভূঁইয়ারহাট থেকে ফেরার পথে বিকেলে কেরোয়া ইউনিয়নের ভাঁটের মসজিদের অদূরে নির্জন এলাকায় পৌঁছালে আসামিরা সংঘবদ্ধভাবে মিরাজকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেন।
তার মাথা, কপাল, বুক ও পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে যখমের চিহ্ন ছিল।
এসময় মিরাজের সঙ্গে থাকা মাসুদ ও সোহেলকেও পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে তারা আঘাত করে। পরে ডাক্তারি রিপোর্টে জানা যায়, মাসুদ, সোহলের আঘাত সামান্য ছিল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আসামিদের মধ্যে মুসলিম, তানজিল হায়দার রিয়াজ, জাহাঙ্গীর ও নুরে হেলাল মামুন শুরু থেকেই পলাতক আছেন। এছাড়া মামলায় রিয়াজ, মোস্তফা কামাল, হারুন প্রকাশ, জহির সর্দার, রফিক উল্যাহ সোহাগ, রাকিব হোসেন রাজু, মাসুদ ও সোহেল বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হয়েছেন। পরে তারা জামিন নিয়ে মুক্ত হন।
ভুক্তভোগী পরিবারের ভাষ্যমতে এরমধ্যে তানজিল হায়দার রিয়াজ, রাকিব হোসেন রাজু ও জহির সর্দার মূল পরিকল্পনাকারী বলে দাবি করেছে মিরাজের পরিবার।
সেদিনের সেই আলোচিত হত্যাকান্ডের ব্যাপারে জানতে চাইলে মিরাজের বাবা আবুল কালাম বলেন, আসামিদের ফাঁসি হলে মিরাজের আত্মা শান্তি পাবে। আসামি রাজু, রিয়াজ ও জহির সর্দার পরিকল্পিতভাবে অন্যদের নিয়ে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে।
আমাকে তারা আদালতে পর্যন্ত যেতে নিষেধ করছে। বিভিন্ন সময়ে তারা ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে আমাকে হুমকি হুমকি প্রদান করেছে। এতে আমি ও আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। আমি আসামিদের ফাঁসির দাবি করছি।
হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে নিহত মিরাজের ছোট ভাই রিয়াজ হোসেন বলেন, আমার ভাইকে ওরা নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার মৃত্যুর পর আমাদের পুরো পরিবার তছনছ হয়ে গেছে।আমরা কর্মহীন এবং অসহায় হয়ে পড়ি সন্ত্রাসীদের ভয়ে। আসামিরা ডিবির ওসি পরিচয় দিয়ে আমার বাবাকে প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে। সেই কল রেকর্ডিংও তথ্য প্রমাণ আমাদের কাছে আছে।
মিরাজ হত্যাকান্ড সম্পর্কে বাদীর আইনজীবী মিজানুর রহমান মুন্সী বলেন, আমরা আদালতে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সাক্ষীদের মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি। রাষ্ট্রপক্ষ ও আমি সুস্পষ্টভাবে আদালতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্পষ্ট করেছি। আশা করি, আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির রায় পাব। হত্যাকান্ডে জড়িত বর্তমানে কোনো আসামিই কারাগারে নেই। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কয়েকজন আসামি শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন বলে বিশিষ্ট আইনজীবী মিজানুর রহমান বলেন ।
জানা যায় হত্যাকাণ্ডের পরদিন জামায়াত নেতা হাফেজ ইউছুফ ও শিবির নেতা পরানসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়। পরবর্তীকালে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের অব্যাহতি দেওয়ার জন্য বাদী ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। এসময় তিনি একটি সম্পূরক এজাহার দেন। এতে রাজু, হারুনসহ ১০ আসামির নাম উল্লেখ করেন। এজাহারে ঘটনার সময় মিরাজের সঙ্গে থাকা মাসুদ, সোহেলকেও আসামি করা হয়।