নুরুল আমিন ভূইয়া দুলাল ,রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধিঃলক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুরে মেঘনা নদীতে চলছে মহাসমারোহে উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে নির্বিচারে গলদা চিংড়ির রেণু পোনা আহরণ ।
অনুসন্ধান ভিত্তিক তথ্য অনুসারে জানা যাচ্ছে যে, স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে চারটি স্পটে এ পোনা আহরণ এবং অবাধে বিক্রির মহোৎসবে মেতেছে স্থানীয় জেলেরা।
অনুসন্ধানে জানা যায় এসব চিংড়ি পোনা আহরণ স্থানীয় প্রশাসন এবং দলিয় প্রভাব খাটিয়ে,
কয়েকটি স্পট থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা স্থানীয় প্রশাসন এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অর্থের বিনিময়ে চিংড়ির এসব রেনু পোনা ড্রাম ও বড় পাতিল ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন ঘের মালিকরা।
চিংড়ী পোনা ধরা নিষিদ্ধ হলেও বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত পোনা আহরণ কারীরা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মেঘনা পাড়ের ৮ থেকে ৯ হাজার জেলে চিংড়ি এ পোনা সংগ্রহ ও বিক্রির কাজ করে থাকে বলে স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানা গেছে।
জানা যায় চিংড়ি রেনু সংগ্রহের কালে নষ্ট হচ্ছে নদীতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনাও। মৎস্য অধিদপ্তর এর স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে ২০০০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে দেশের উপকূলীয় এলাকায় মাছের পোনা আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
স্থানীয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলেরা প্রতি বছর রায়পুর উপজেলার মেঘনা উপকূলীয় এলাকার নদীতে এপ্রিল থেকে আগষ্ট পর্যন্ত চলে মৎস্য চিংড়ি রেণু আহরণ ও বিক্রির মহোউৎসব।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় মেঘনা পাড়ের জেলেরা মশারি, নেট জাল, ছাকনি ও চাদর দিয়ে এ পোনা শিকার করে শিকার করে বিক্রি করেন।
রায়পুর উপজেলার পানিরঘাট, পুলিশ ফাঁড়ির সামনের হাজীমারা ঘাট, নতুন ব্রিজ এলাকা ও মেঘনা বাজারসহ আরো চারটি স্পটে এই চিংড়ির রেণু পোনা বিক্রির হাট বসে ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলের কাছ থেকে জানা গেছে, এসব স্পট থেকে প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে তিন কোটি টাকার পোনা লেনদেন হয়।
পোনা বিক্রির টাকা থেকে একটি অংশ স্থানীয় প্রশাসন ও দলীয় লোকদের মাঝে ভাগ-বাটোয়ারা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, উপজেলা প্রশাসনের মৎস্য কর্মকর্তারা তদারকি না করায় এবং আইনানুগ ব্যবস্থা না থাকার সুযোগে এভাবে অবাধে মাছের পোনা আহরণ চলছে প্রতিনিয়ত। জানাগেছে চিংড়ির রেণু পোনার সাথে এতে বিভিন্ন প্রজাতির মৎসের পোনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
রায়পুর উপজেলার উপকূল মেঘনা পাড়ে গিয়ে সরজমিনে অনুসন্ধানে দেখা যায়,ওই চারটি স্পটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও পোনা বিক্রি করছেন স্থানীয় হাজামারা বাজারের শাহাজান গাজী, মোল্লারহাট পানির ঘাট নিয়ন্ত্রণ ও নিজ বাড়িতে বসে বিক্রি করছেন নাছির গাজী, হাজীমারা এলাকার নতুন ব্রিজ ঘাট নিয়ন্ত্রণ ও বিক্রি করছেন দুলাল চৈয়াল ও তৈহিদ সর্দার, এবং উত্তর চরবংশী মেঘনা বাজার ঘাট নিয়ন্ত্রণ ও বিক্রি করছেন
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জয়দুল কবিরাজসহ ৫ জন বড় ব্যবসায়ী। স্থানীয় জেলে কালাম , কালু মাঝি, মনির আহম্মেদ ও রবিনসহ ১২ থেকে ১৫ জন জেলে এ প্রতিবেদককে জানান।
জানা গেছে মেঘনা নদী থেকে সংগ্রহ করা পোনা ওই চারটি স্পট থেকে প্রতিদিন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল বরিশাল,খুলনা,সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলার মহাজনরা এসে তাদের কাছ থেকে চিংড়ির রেণু পোনা কিনে নিয়ে যায়।
জানা গেছে প্রতি হাজার চিংড়ি রেণু বিক্রি হয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে। জানা গেছে পাইকাররা জেলেদেরকে অগ্রিম অর্থ দিয়ে থাকেন চিংড়িপোনা আহরণের জন্য।
ওই এলাকাবাসীর সূত্র থেকে জানা গেছে, চিংড়ি রেণু ক্রেতা হাজীমারা বাজারের শাহাজান গাজী, পানির ঘাট এলকার নাছির গাজী ও মেঘনা বাজারের জয়দুল কবিরাজদের বিশাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব গলদা পোনা ধরে এর সাথে ধ্বংস করা হচ্ছে কোটি কোটি মাছের অন্য প্রজাতির পোনা মা। ধ্বংস করা হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মৎস্য আহরণ কারীরা জানান প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এমন অন্যায় কাজ করছে বলে মূল সিন্ডিকেট হোতারা।
এ বিষয়ে একজন স্থানীয় ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলে জলিল বেপারী আরও বলেন, চিংড়ির পোনা বাছাইয়ের সময় নষ্ট হয়ে যায় অন্য প্রজাতির লক্ষ লক্ষ পোনা মাছ। চিংড়ি পোনা আহরণকারী একজন বলেন এ ব্যবসায় আমাদের কোটি টাকা লগ্নি করা রয়েছে।
এই জন্য নিজেদের লগ্নিকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সবাইকে ম্যানেজ করেই আমাদেরকে এ ব্যবসা চালিয়ে যেতে হয়।
এই অবৈধ চিংড়ি পোনা পরিবহনে এখন সড়ক পথ বা দিয়ে নদী পথে বেশি করে পাচার করা হয়।
রায়পুর উপজেলা প্রশাসনের কাছে জানতে চাইলে চিংড়ির রেণু পোনা আহরণ ও স্পটে বিক্রির কথা স্বীকার করে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, নদী থেকে চিংড়ির রেণু পোনা ধরা আইনগত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
একশ্রেণির অসাধু লোকজন মশারি জাল দিয়ে নদীর পানি ছেঁকে গলদা চিংড়ির পোনা শিকার করছে। এসব পোনা ধরার সময় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনাও ওঠে আসে।
চিংড়ির পোনা বাছাইয়ের সময় বাইল (বেলে), সুরকা, পোয়া, পাঙাশ, বাছা, বাতাসি, পাবদাসহ ৭০টি প্রজাতির মাছের ডিম ও পোনা নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, আমরা মেঘনা বাজারের স্পট রেণু পোনা বিক্রির সময় একটি গাড়ী আট করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি।
এছাড়াও বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে রেণু ধরার সরঞ্জামাদি পুড়িয়ে ফেলছি। এসব নিষিদ্ধ ব্যবসার সাথে প্রশাসনের কোনো হাত নেই বলে মৎস্য কর্মকর্তা জানান ।