এস আই সুমন,রাবিঃ
মানসিক নির্যাতনের শিকার ছাত্রীকে হলে তুলে দিতে গিয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক এম তারেক নূর।
বুধবার (০১ মার্চ) দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা হলে এঘটনা ঘটে। প্রায় তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর সাড়ে পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসে তাকে উদ্ধার করেন।
শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, হল প্রাধ্যক্ষের উপস্থিতিতে মানসিক নির্যাতনের শিকার সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী সুমাইয়া দুপুর ১টার দিকে হাসপাতাল থেকে ছাত্র উপদেষ্টার দফতরে আসেন। এর আগে রাতের সিদ্ধান্ত হয় অভিযুক্ত সংগীত বিভাগের ছাত্রী দোলনের সিট অন্যত্র স্থানান্তর করার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে নিয়ে দেড়টার দিকে হলে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা। এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন সঙ্গীত বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক শায়লা তাসমিন। সেখানে তার সাথে ছাত্র উপদেষ্টার বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে সেখান থেকে চলে যান শায়লা তাসমিন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা হল গেটে উপস্থিত হন। তাদের শিক্ষককে অপমান করা হয়েছে উল্লেখ করে তারা হল গেট অবরুদ্ধ করে আন্দোলন করতে থাকেন। এতে হলের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন ছাত্র উপদেষ্টা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সঙ্গীত বিভাগের সভাপতি শায়লা তাসমিন বলেন, আমার বিভাগের এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে অন্য বিভাগের এক ছাত্রীকে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানতে আমি ছাত্র উপদেষ্টাকে ফোন দেই। কিন্তু তিনি ফোন ধরেন নি। পরে জানতে পারি তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলে আছেন। তখন এ বিষয়ে তার সাথে কথা বলার জন্য আমি হলে যাই। সেখানে তিনি আমার শিক্ষার্থীদের সামনে আমাকে অপমানজনক কথা বলেন। এক পর্যায়ে বলেন 'হু আর ইউ' আপনি কেন এখানে আসছেন। এতে আমি অপমানিত বোধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করি।
এদিকে ছাত্র উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করার খবর পেয়ে বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা হলের প্রধান ফটক সংলগ্ন রাস্তার এক পাশে অবস্থান নিতে শুরু করে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড় চারটা নাগাদ সমাজকর্ম বিভাগের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়। তারা জানান, তাদের বিভাগের ছাত্রীকে সিটে তুলে দিতে এসে ছাত্র উপদেষ্টা অবরুদ্ধ হয়েছেন। তাই তারা তাকে উদ্ধার করতে এসেছেন।
পরে পৌনে পাঁচটার দিকে হল গেইটে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। পরে তারা ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক তারেক নূরকে বের করে নিয়ে আসতে চাইলে গেইটের ভিতরের দিক থেকে সামনে অবস্থান নেন সংগীত বিভাগের ছাত্রীরা। এসময় কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী হল থেকে তারেক নূরকে বের করে আনতে চাইলে সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা চিৎকার শুরু করে। এক পর্যায়ে সমাজকর্ম ও সংগীত বিভাগ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এসময় হল গেইটের সামনে দুই উপ-উপাচার্য, জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক, প্রক্টর উপস্থিত ছিলেন। কিছুক্ষণ পর জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডেকে বলতে শোনা তোমাদের কত বড় সাহস তোমরা আমাদের ওপর হামলা করতে এসেছ। পরে প্রক্টরিয়াল বডির হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এদিকে সাড়ে ৫টার দিকে অধ্যাপক তারেক নূরকে নিয়ে হল থেকে বের হন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম ও অধ্যাপক হুমায়ূন কবির, জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন, স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য শাহরিয়ার জামান ববি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ- উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণার জায়গা। এটি কোনো নির্যাতন ও অত্যাচার করার জায়গা নয়। এখানে শিক্ষকদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এমন আচরণ শেখানো হয় না। যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনারও তদন্তও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সকালে হল প্রাধক্ষ্যের উপস্থিতিতে সুমাইয়া নামে এক শিক্ষার্থীকে মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠে সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী দোলন ও হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক স্মৃতি বালার বিরুদ্ধে। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে রামেকে ভর্তি করা হয়। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেন দুই ভুক্তভোগীকে ভিন্ন দুই ব্লকে পাঠানোর। এছাড়া ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে।